একেএম সুমন, রংপুর ব্যুরো:
আগের মত আর দীর্ঘক্ষণ লম্বা লাইনে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়না সেবা গ্রহীতাদের, নেই দালালেরও আনাগোনা।
হয়েছে এক সপ্তাহে গাড়ীর লাইসেন্স প্রাপ্তির নতুন রেকর্ড। বলছি বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) রংপুর সার্কেল অফিসের কথা। যেখানে বছর তিনেক আগেও অফিসের চিত্র ছিলো উল্টো। বিআরটিএ রংপুর সার্কেলের সহকারী পরিচালক(ইঞ্জিঃ) ফারুক আলমের প্রচেষ্টা আর দক্ষতায় বদলে গেছে রংপুর বিআরটিএ’র চিত্র।
ফারুক আলম রংপুর সার্কেলের দ্বায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বড় পরিবর্তন আসতে থাকে। তার হাত ধরেই রংপুর বিআরটিএ স্মার্ট বাংলাদেশের যুগে প্রবেশ করেছে। কয়েক বছর আগেও নির্দিষ্ট দিনে ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাওয়া ছিল অনেকটাই স্বপ্নের মতো। লাইসেন্সের আশায় বিআরটিএ অফিস ঘুরতে হতো বছরের পর বছর। থাকতো দালালদের দৌরাত্ম্য। তবে এখন বদলে গেছে সেই দুর্ভোগের চিত্র।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের আশায় এখন আর গ্রাহককে বারবার আসতে হয় না অফিসে। ঘরে বসেই অনলাইনেই অনেকে করছেন শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন। এরপর তাদের দেওয়া সময় অনুযায়ী তিনটি কাজ শেষ করে ঘরে বসেই পাওয়া যায় ড্রাইভিং লাইসেন্স।
রোববার(১৩আগষ্ট)সরেজমিন রংপুর বিআরটিএ অফিস ঘুরে দেখাগেছে, লাইসেন্স গ্রহীতা ও নাম পরিবর্তন বা ফিঙ্গার করার প্রয়োজন ছাড়া আসেন নি কেউ। প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় তাদের- শরিফুল ইসলাম নামে পীরগাছা থেকে একজন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য টাকা জমা দিতে এসেছেন। তিনি জানেন না যে এখন আর আসতে হয় না ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে আসলেই বাকি কাজ হয়ে যায়। বিআরটিএর সেবাঘরের একজন তাকে ভালোকরে বুঝিয়ে দিলেন। তিনি বুঝতে পেরে বেজায় খুশি।
শরিফুল প্রতিবেদককে জানান, এতো সোজা হয়েছে এখন জানা ছিলো না। আমার শুধু সরকারী খরচের টাকা লাগলো বাড়তি কোন টাকা খরচ হয় নাই। বাহিরে মানুষ কত কথা বলে কিন্তু আমি এসে তো দেখলাম উল্টা চিত্র। কিন্তু এরআগেও একবার আসছিলাম ৩/৪ বছর আগে তখন ডাবল টাকা দেওয়া লাগছিলো। প্রায় ৩দিন ঘুরে টাকা জমান দিতে পারছিলাম।
রংপুর নগরীর কেল্লাবন্দ সর্দারপাড়ার হাফিজুর রহমান জানান, আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স কল দিয়ে কেল্লান্দে এসে দিয়ে গেছে। আগেতো শুনছি নাকি অনেক ঘুরা লাগতো বছরের পর বছর। টাকা দেওয়া লাগতো তাও পাওয়া যাইতো না। কিন্তু আমি টাকা জমা দেওয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় লাইসেন্স হাতে পাইছি। আমি খুব খুশি এই অফিসারের উপর।
সেবাগ্রহীতা মাহাবুবার রহমান জানান, তিনি মাত্র ৬দিনে মধ্যেই রংপুর বিআরটিএ থেকে ডিজিটাল সিস্টেমে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছেন। যা আগে অ্যানালগ সিস্টেমে প্রায় কয়েকমাস সময় লেগে যেতো। স্বল্প সময়ে সেবা পেয়ে তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
গুাতীপাড়ার স্বর্ণ দোকানের কারিগর মেহেদী হাসান জানান- এখন বিআরটিএ অফিসের সবচেয়ে ভালো দিক যেটা বাড়িতে বসে থেকেই লার্নার করা যাচ্ছে। বিআরটিএ অফিসে যেতে হচ্ছে না কারও পিছনে ঘুরতে হচ্ছে না। ব্যাংকের টাকা জমা দেয়ার মাত্র ১৫ দিনেই লাইসেন্স হাতে পেয়েছি। খুব ভালো লাগছে। বন্ধুদের কাছে শুনেছি যে বিআরটিএ অফিসে নাকি লাইসেন্স করা খুব ঝামেলা। নিজে করে দেখলাম কোন ঝামেলাই নেই। বিআরটিএর অফিসার ফারুক ভাই খুব ভালো মানুষ। আমার কথা শুনলেন ভালো করে বুঝিয়ে দিলেন এবং পরীক্ষা দিয়ে মাত্র ১৫ দিনেই লাইসেন্স হাতে পাইলাম ধন্যবাদ তাকে।
রংপুর জেলা পুলিশের টিআই(প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বায়োমেট্রিক ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করলে গ্রাহকের কাছে একটি ডকুমেন্ট থাকবে। সেটা দেখালেই আমার তাকে ছাড় দেবো। তাকে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হবে না। সহজেই রাস্তায় চলাফেরা করতে পারবেন।’অনলাইনে আবেদন করলেই মোবাইলে ফিরতি বার্তা পাবেন গ্রাহকরা। আর সেটা দেখেই সড়কে পরীক্ষা করা যাবে কে লাইসেন্সের আবেদন করেছেন, কে করেননি। এতে আইনগতভাবে যান চলাচলে ভোগান্তি হবে না।
বিআরটিএ’র রংপুর সার্কেলের সহকারী পরিচালক(ইঞ্জিঃ) ফারুক আলমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি রংপুরে আসার পর থেকে হয়রানি ছাড়াই গ্রাহকরা তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পেয়ে যাচ্ছেন। শুরুতে এই ধারাটায় খুব বেগ পেতে হয়েছে। তবে আমি দালাল মুক্ত একটা বিআরটিএ অফিস উপহার দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা অফিসে যেন কেউ এসে হয়রানির শিকার না হয়। আমাদের বিআরটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলে খুব আন্তরিকভাবে গ্রাহক সাধারণকে সেবা দেন। আমরা চেষ্টা করছি শতভাগ হয়রানি ও দালাল মুক্তের।
ফারুক আলম বলেন, সবথেকে বেশি সেবা গ্রহীতা আসে ড্রাইভিং লাইসেন্সের। আমরা তাদের টেস্ট দেওয়ার পর ওইদিনই ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়। মাঝে মধ্যে হয়তো ব্যাতিক্রম দু একটা হতে পারে। যদি টেস্টে পাস করেন,পরবর্তীতে ফি জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছেন। গ্রাহককে আর বিআরটিএ অফিসেও আসতে হয়না।